বিবর্তনের মহাযাত্রা-করুণ জ্যোতি চাকমা

কোনো এক ভীষণ ভারী জ্বলন্ত অগ্নিপিন্ড থেকে আজকের এই অসীম রহস্যময় মহাবিশ্বের সূত্রপাত ঘটেছিল।বিস্ফোরণের সেই ধ্বনি আজও মহাবিশ্বের প্রতিটি কণায় কণায় প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
প্রকম্পিত হচ্ছে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে, নক্ষত্র থেকে নক্ষত্রে।বিস্ফোরণের সেই যে চমকে ওঠা ঝিলিক তা বারবার প্রতিফলিত হচ্ছে মহাবিশ্বের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।সারা বিশ্বে আলোর ছড়াছড়ি।তাইতো কবিগুরু গেয়ে ওঠেন,

 "আলো আমার, আলো গো ভাই,
আলোই ভুবন ভরা।"
কিংবা "আনন্দলোকে, মঙ্গলালোকে, বিরাজ সত্য সুন্দর।"

আলোর মঙ্গলময় দ্যুতিতে জাগরিত হচ্ছে প্রাণের পরমাত্মা।অর এই পরমাত্মাতে যেন অবিরাম প্রাণের কম্পন উঠানামা করছে প্রতিনিয়ত সেই গগনবিদারী বিকট বিস্ফোরণের মহাশব্দের রেশে।আর বিস্ফোরণে উদ্ভব তাপটুকু যেন আমরা বহন করে চলেছি বংশ থেকে বংশধরে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পরিমাপে।কি এই মহাবিস্ফোরণ? কেন হলো? কিভাবে হলো? এ যেন এক চির রহস্যময় অভেদ্য গোলকধাঁধাঁ।এসব রোমনঞ্চকর কাহিনী শুনলে শিড়দারা দিয়ে যেন এক অজানা উত্তেজনার অনুভূতি নেমে যায়।এ বিস্ফোরণের নাম হলো "বিগ ব্যাঙ"।এই বিস্ফোরনের পর থেকে সময় মাত্রাকে সঙ্গে নিয়ে শুরু হলো এক মহাযাত্রার
রোমাঞ্চকর কাহিনী।এ যেন অসীম এক রূপকথা।যে রূপকথার শেষ কোথায় কেউ বলতে পারবে না।

কিন্তু এই বিশ্ব জগত যতোটা  রহস্যময়, ঠিক ততোটা বিচিত্র পৃথিবীর মানুষ।এ মহাবিশ্বে পৃথিবী নামক ছোট গ্রহের বসবাসকারী বালুকণার মতো কতগুলো দু পেয়ে প্রাণী যখন আকাশ পানে চেয়ে নিজেদের মনে জমে থাকা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে ঠিক তখন হয়তো অন্যপ্রান্তে কেউ না কেউ সেই একি উত্তর খুঁজতে দাড়িলম্বা অবস্থায় নাওয়া খাওয়া ছেড়েছে।মহাবিশ্ব কি? মহাবিশ্ব কেন? মহাবিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হলো? কি, কেন এবং কিভাবে -এই তিনটে শব্দ মানুষের শেষ্ঠ হাতিয়ার।

পৃথিবীতে যতসব রহস্য এইগুলো দিয়েই মানুষ বের করেছে।এ তিনটে শব্দের পরতে পরতে যেন সৃষ্টির সমস্ত উত্তর লুকিয়ে আছে।পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টির গল্প বলা যাক।পৃথিবী যখন বিস্ফোরণের আগুণে জ্বলতে জ্বলতে ক্লান্ত হয়ে একটু শান্ত হলো তখন অক্সিজেন আর হাইড্রোজনের মেল বন্ধন ঘটলো এবং পানি নামক এক তরল পদার্থের সৃষ্টি হলো।সাথে সাথে মহাযাত্রার রহস্যময় উপন্যাসের ভূমিকা রচিত হলো।পরে এই পানিতে জীবনের সূচিপত্রের এক লম্বা লাইন সৃষ্টি হলো তখন, যখন অক্সিজেন,নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন এবং কার্বনের সম্মিলনে তৈরী হলো একটি ক্ষুদ্র প্রাণ।

তারপর সময়ের সাথে সাথে চলে এলো এককোষী এ্যামিবা, এলো জুয়োপ্লাংটন, মস, শৈবাল, ইত্যাদি ইত্যাদি।তারপর আবার সময় অতিবাহিত হলো।পরে পৃথিবীর মাটি থেকে রস গ্রহণ করে সগৌরবে মাথা তুলে দাড়ালো বৃক্ষরাজির দল।একে একে দুপেয়ে, চারপেয়ে, উভচর, আকাশচর, জলচর, স্থলচর সবাই চলে এলো যেন তারা সবাই সেই মহাযাত্রার সাক্ষী হবে ।এভাবে উপন্যাসটিতে একের পর এক অধ্যায় সংযোজিত হলো।এই হলো প্রাণ সৃষ্টির সাতকাহন।

আজ থেকে অনেক কাল আগে আমাদের পূর্বপুরুষ নরমানবেরা বেঁচে থাকার শ্রমের ফলে নিজেদের একটু একটু করে বিকাশ করছিল।হিসেব করে দেখলে তা আজ থেকে কুড়ি লক্ষ বছর হবে।তারা সভ্যতার মন্থর চাকাকে নিজেদের শ্রমের দ্বারা একটু একটু করে গতিময়তা দান করছিল।প্রথমে শিকার করা শিখলো, তারপর আগুন আবিষ্কার করলো।এরপর দলবদ্ধ হয়ে থাকতে থাকতে সমাজ গঠন করলো।পরে পরিবার গঠিত হলো।এভাবে আস্তে আস্তে আমাদের পূর্বসূরিরা একটু একটু করে সভ্য হতে লাগল।এ বড় এক বিচিত্র গল্প।তারা প্রকৃতিকে আয়ত্ত করে নিল।প্রকৃতির শক্তিকে ব্যবহার করতে শিখলো।কিন্তু প্রকৃতিও তাদের এমনি এমনি ছাড়ে নি।


কত ঝর-ঝঞ্চাত, চড়াই-উতরাই, লড়াই-সংগ্রামের পর আজ পৃথিবীতে মানবজাতি সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী এবং সৃষ্টির সের জীব।আদিকাল থেকেই আমরা যেদিকে গেছি সেদিকে রূপকথার পঙতিগুলোকে সাজিয়েছি।এখনো সাজিয়ে চলেছি।আর প্রমাণ করেছি আমরাই সেই রূপকথার প্রধান চরিত্র।হঠাৎ আজ করোন নামক একটি ভাইরাস পুরো মানব সমাছকে ভীত সন্ত্রস্ত করে তুলেছে।যারা বড় বড় হীংস্র জানোয়ারের সাথ লড়াই করে জিতেছে, প্রকৃতির সৃষ্ট প্রলয়কারী দুর্যোগকে পরাজিত করেছে।এই চরিত্রটি কি পারবে করোনা ভাইরাস নামক এক পৃষ্টায় আটতে যাওয়া লাইন গুলো লিখতে।পারবে কি বিবর্তনের মহাযাত্রায় নিজেদরকে ঠিকিয়ে রাখতে?

লেখক:করুণ জ্যোতি চাকমা

Comments

Popular posts from this blog

বেলত্তমা জীংকানি-করুন জ্যোতি চাঙমা